ডাক্তারের সাথে এ কেমন আচরণ !

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক চিকিৎসক ও তার পরিবার। বর্তমানে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন তিনি। এরই মধ্যে দুইবার টেস্ট করিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তাতে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু যে বাসায় আছেন সেখানকার কয়েকজন রুঢ় আচরণ করছেন ওই চিকিৎসক ও তার পরিবারের সঙ্গে। চিকিৎসকের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। এরইমধ্যে চিকিৎসক পরিবারের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাদেরকে তালাবদ্ধ করে রাখার হুমকি দেয়া হয়েছে।

সামাজিকভাবেও হেয় করা হচ্ছে। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গায়। জেলার সদর থানার পুরাতন হাসপাতালের সামনে শান্তিপাড়ায় আমিনুল ইসলামের বাসায় ভাড়া থাকেন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলোজি চিকিৎসক এম এ রশীদ। সম্প্রতি ওই হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। তার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন এম এ রশীদ। পরে মৃত ব্যক্তির করোনা টেস্ট পজেটিভ আসলে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে যান। ওই চিকিৎসকের পাশের ফ্ল্যাটে থাকা ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত টি আই মাহবুব কবির মিঠু দফায় দফায় চিকিৎসক ও তার পরিবারের সঙ্গে অমানবিক ও রুঢ় আচরন করেন বলে অভিযোগ করেছেন ডা. এম এ রশীদ। তিনি তার ফেসবুকে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে বলেছেন,আমার প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে অমানবিক আচরণ আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। ফ্ল্যাটের সব ভাড়াটিয়া মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে নাকি তালা দিয়ে রাখা হবে, আমি যেন বাইরে বের হতে না পারি। এটার নেতৃত্বে আমার পাশের ফ্ল্যাটের একজন সম্মানিত পুলিশ সদস্য। নিজেকে আজ নিম্নশ্রেণির কীট মনে হল। আমি আমার সন্তান কাউকেই ডাক্তার বানাবো না। এ প্রসঙ্গে টিআই মাহবুব কবির মিঠু মানবজমিনকে বলেন, আসলে এটা ছিলো সামান্য বিষয়। আমিসহ অন্যান্য ভাড়াটিয়ারা ভয় থেকে তার সঙ্গে হয়তো কিছু কথা বলেছি। চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার ও সদর থানার ওসিকে বিস্তারিত জানিয়েছি। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে ডা. এম এ রশীদ মানবজমিনকে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই চিকিৎসক। আমরা সচেতন মানুষ। দুইবার পরীক্ষা করে রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও স্বেচ্ছায় সতর্কতার সঙ্গে নিজের ঘরে অবস্থান করছি। এরপরও তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করছেন তা অমানবিক। আমার স্ত্রীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও অভদ্রতাসুলভ আচরণ করেছেন। চিকিৎসক হিসেবে এটা আমাদের জন্য দারুন কষ্টদায়ক। তাদের আচরণে মনে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে ভুল করেছি। সম্প্রতি এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডা. এম এ রশীদ। এখানে হুবহু তা তুলে ধরা হলো-মানব সেবার ব্রত নিয়ে চিকিৎসা পেশায় এসেছি। শুধু করোনা কেন, যে কোনো রোগীদের চিকিৎসায় আমি ভয় পাই না। আজ অষ্টম দিন হল কোয়ারেন্টাইনে আছি। একটি ফ্ল্যাটে একা বন্দি অবস্থায় দিন কাটছে। প্রিয় সন্তানের মুখ দেখি না। খুব আদর করতে ইচ্ছা করে, কাছে টানতে পারি না। কতদিন হল সূর্যের আলো দেখি না। ঝুম ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ কানে আসে। জানালা খোলার সাহস হয় না। কারণ আমি নিজে যেমন আমার শরীর নিয়ে ভাবি আমার দ্বারা অন্য কেউ যেন আক্রান্ত না হয় সেটা নিয়েও ভাবি। যদিও আমার টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ। এরই মাঝে আমার প্রতিবেশী পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে অমানবিক আচরণ আমাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। ফ্লাটের সব ভাড়াটিয়া মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে নাকি তালা দিয়ে রাখা হবে, আমি যেন বাইরে বের হতে না পারি। এটার নেতৃত্বে আমার পাশের ফ্ল্যাটের একজন সম্মানিত পুলিশ সদস্য। নিজেকে আজ নিম্নশ্রেণির কীট মনে হল। আমরা এ কোন সমাজে বাস করি যেখানে ষষ্ঠ গ্রেডের একজন সরকারি অফিসারকে অপমান করে দশম গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণীর পুলিশ। আমিতো চুরি ডাকাতি খুন রাহাজানি করি নাই। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আজ কোয়ারেন্টাইন এ। প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি কীট না ওরা,? করোনা এমন একটি ভাইরাস,আমি আজ নেগেটিভ তুমি পুলিশ কাল পজেটিভ হতে পারো ! আমি ডাক্তার তোমার পাশে থাকব আমি না হয় অন্য কেউ! ভাবছো কেন করোনা তোমাকে অ্যাটাক করবে না? আমি অনেক পুলিশকে দেখেছি সারাটা দিন করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোদেপুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। প্রশাসনের ভাইয়েরা সারা দিন-রাত পরিশ্রম করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে, মার্কেটিং অফিসাররা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, সাংবাদিক ভাইয়েরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে খবর সংগ্রহ করছে,মানুষকে সচেতন করতে। জনপ্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেছে জনগণকে সেবা করতে। তোমার গায়ে ওই পবিত্র পোশাক মানায় না। আমাকে যে অপমানটা আজকে করলে আল্লাহ তোমাকে কোন না কোনদিন সুদে আসলে ফেরত দিবে। তোমাদের মতো নরকের কীটদের কাছ থেকে অপমানিত হলেও সমাজের অনেক মানুষের কাছ থেকে আমরা দোয়া, ভালোবাসা পাই এটাই আমাদের সম্পদ, এটাই আমাদের শক্তি। আমি আমার সন্তান কাউকেই ডাক্তার বানাবো না। কিন্তু আমি বারবার হাজার বার ডাক্তার হতে চাই। আমি খুশি ডাক্তার হয়ে। মুক্ত হয়ে আবার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই ,তুমি যতই আমাকে অপমান করো না কেন আমি বিন্দুমাত্র পরোয়া করি না। আল্লাহ যেন আমাকে মানব সেবা করতে করতেই মৃত্যুবরণ করায়। ডেঙ্গুতেও ছিলাম,করোনাতেও আছি। ততদিন থাকবো,যতদিন বাঁচি। অপমান করেছো,পরোয়া করি না, তাতে দুঃখ তো লাগে,তাই ঘুম আসছে না রাতে। (সবাইকে শুভেচ্ছা ও হোম কোয়ারেন্টাইন ভালোবাসা।)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিক্ষক ছাত্রী কঠিন প্রেম, এলাকায় তোলপাড়

বাঙ্গালী ডাঃ শিউলি স্বামী ছাড়াই সন্তানের মা হলেন !

চরমোনাই পীরের মুরিদ শিশু ধর্ষণকারী খুনি মোবারক গ্রেফতার