ফিনল‍্যান্ডের শিক্ষা ব‍্যবস্থা


ফিনল‍্যান্ডের শিক্ষা ব‍্যবস্থা
ফিনল্যান্ডের অধিবাসীদের ফিনিশ বলা হয়ে থাকে। ফিনিশদের জন্য
শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই ফ্রি, মানে কোনো টাকা পয়সা দিতে হয় না। বলা চলে এদিক থেকে ফিনিশরা খুবই ভাগ্যবান। আর এদের শিক্ষার হার শত ভাগ। ফিনল্যান্ডে ১০টি মাল্টিডিসিপ্লিনারি ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটিসহ পাঁচটি স্পেশালইজড ইউনিভার্সিটি, ২৭টি পলিটেকনিক বা অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি আছে। গণিত ও বিজ্ঞান শিক্ষায় ১৫ বছর বয়সী ফিনিশ স্টুডেন্টদের ওইসিডি (OECD) দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান ওপরের দিকে (PISA, 2015)।
ফিনল্যান্ড পড়াশোনার মানের ব্যাপারে আপসহীন। ছোটকালে এদের পড়াশোনা শুরু হয় আমাদের দেশের বাল্যশিক্ষার মতো করে। যেটাকে এখানে বলা হয়ে থাকে ‘পাইভাকোতি’। যার বাংলা হচ্ছে ‘দিবা যত্নকেন্দ্র’। ৩ বছর বয়স থেকে বাচ্চাদের পাইভাকোতিতে দিতে হয়। পাইভাকোতিতে খেলাধুলা, খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো আর আধো আধো ভাষা শিক্ষা শুরু হয়।
নিয়মিত বাচ্চাদের বাবা-মায়ের অনুমতিক্রমে ঘুরতে নেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। এদের এক ধরনের বিশেষ গাউন পরানো হয় কোথাও নিয়ে যাওয়ার সময়। গাউন দেখেই সবাই বুঝতে পারে এরা কে। এদের ট্রাফিক সিগন্যাল কী সেটা শেখানো হয় ব্যবহারিকভাবেই এবং এভাবেই এরা সিগন্যাল মানতে শেখে। এদের জন্য বাস, ট্রাম ও মেট্রো—এসব যানবাহন ফ্রি। আর দলবাঁধা অবস্থায় ওই বিশেষ গাউন থাকলে বাস, ট্রাম ও মেট্রোর চালকেরা বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন। যাতে করে বাচ্চাদের অসুবিধা না হয়। কারণ বাচ্চাদের অসুবিধা হলে চালকেরা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন। বাচ্চারা যখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ট্রেনে চলাফেরা করে তখন কন্ডাক্টরেরা বাচ্চাদের বিশেষ টিকিট দেয়, যেটা ফ্রি। এর অর্থ হলো বড় হয়ে বাচ্চারা যেন টিকিট কিনতে অভ্যস্থ হয়। এখানে বলাবাহুল্য একমাত্র বাস ছাড়া কোনো যানবাহনে টিকিট চেক করা হয় না। কিন্তু মাঝে মাঝে ইন্সপেক্টর ঝটিকা অভিযানে টিকিট চেক করেন। বিনা টিকিটের জরিমানা হলো ৮০ ইউরো।
এই দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি। বাচ্চারা হেসেখেলে পড়াশোনা করে এখানে। নাই কোনো হোমওয়ার্ক আর নাই কোনো ভারী ব্যাগ বহন করার ঝামেলা। ন্যায়, নীতি, সততা, মানবিকতা—সবকিছুই এদের শেখানো হয় ব্যবহারিকভাবে।
পাইভাকোতি শেষ করে ছয় বছর বয়স থেকে প্রাইমারি স্কুল শুরু করে। এখানে প্রাইমারি স্কুলকে বলা হয় ‘পেরুছ কৌলু’। কৌলু শব্দের অর্থ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর হাইস্কুলকে বলা হয় ‘লুকিও’। এখানকার হাইস্কুল হচ্ছে বাংলাদেশের এইচএসসি সমমানের। প্রতি বছর এপ্রিলের ৩০ তারিখ ও পয়লা মেতে এরা লুকিও গ্র্যাজুয়েশন উদ্‌যাপন করে সাদা ক্যাপ পরে। বয়স্ক মানুষজনও তাদের ক্যাপ নিয়ে নতুনদের সঙ্গে শামিল হয়। ৩০ এপ্রিল বিকেলবেলা থেকে বড় আকারে সারা ফিনল্যান্ডে এই অনুষ্ঠান হয়। পরদিন মে দিবস। এই দিনে সবাই পার্কে পিকনিক অনুষ্ঠান করে। মে দিবসের এই অনুষ্ঠানকে ‘ভাপপু’ বলা হয়ে থাকে। এই দিনটা আমাদের বাংলাদেশের বৈশাখী অনুষ্ঠানের মতো হয়।
লুকিও শেষ করে ব্যাচেলর ডিগ্রি শুরুর পালা। ব্যাচেলর ডিগ্রিকে এখানে বলা হয় ‘কান্ডি তুতকিমুস’। দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে তারা। ইউনিভার্সিটি অথবা অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা থিওরি আর অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যাবহারিক বেশি। সাড়ে তিন থেকে চার বছরের কোর্স। ডিসেম্বর আর জুলাই ছাড়া প্রতি মাসেই গ্র্যাজুয়েশন হয় একটি করে। চার বছরের কোর্স কেউ তিন বছরে করে। আবার কেউ করে আরও বেশি সময় নিয়ে। এটা স্টুডেন্টদের ওপর নির্ভর করে। যারা বেশি সময় নিয়ে করে তারা মূলত পার্ট টাইম জব করে। এখানে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য কোনো গাউন নাই। সার্টিফিকেটের পাশাপাশি সবাইকে একটিকরে গোলাপ ফুল ধরিয়ে দেওয়া হয়। গ্র্যাজুয়েশনে কেউ উপস্থিত না থাকতে পারলে তার বাসায় সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এখানে পাস করতে হলে শতকরা ৫০ ভাগ মার্ক পেতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিক্ষক ছাত্রী কঠিন প্রেম, এলাকায় তোলপাড়

বাঙ্গালী ডাঃ শিউলি স্বামী ছাড়াই সন্তানের মা হলেন !

চরমোনাই পীরের মুরিদ শিশু ধর্ষণকারী খুনি মোবারক গ্রেফতার