পরকীয়া দেখে ফেলায় মেয়ে হত্যাকারী বাবা গ্রেফতার

অনলাইন নিউজ :
নেত্রকোনার রোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর ফরিদা হত্যা মামলার আসামী নিহত ফরিদার পাষন্ড পিতা সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। পিতার পরকীয়া প্রেমের অবৈধ দৃশ্য দেখে ফেলার দায়ে গত ১৬ অক্টোবর ১৬ সালে ফরিদাকে সুকৌশলে হত্যা করে তার পিতা সবুজ মিয়া। নেত্রকোনা দুর্গাপুরের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি পুলিশ।

বিশেষ পুলিশ সুপার (অপঃ ময়মনসিংহ) নির্দেশে সিআইডি নেত্রকোনা জেলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রীতেশ তালুকদার ও আবু হানিফা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুর ১২টার সময় কৃষকের বেশ ধারণ করে দুর্গাপুরের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে সবুজ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

জানাযায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউরা ইউনিয়নের দ্বিরালী গ্রামের সবুজ মিয়া তার পরকীয়া প্রেমের অবৈধ কর্মকান্ড দেখে ফেলায় ১৬ বছরের মেয়ে ফরিদাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গুছালী ঘরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে ২০১৬ সনের ১৬ অক্টোবর।

থানা পুলিশের তদন্তের পর জটিল এই মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারস এর মাধ্যমে নেত্রকোনা সিআইডিতে আসে। সকলের ধারণা ছিল প্রেম ঘটিত কারণে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এবং থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ডাক্তার এর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট।

ঘটনার পাঁচ মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে বাদী কর্তৃক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কেউ কেউ তো বলেই দিল ডাক্তার ভূল রিপোর্ট দিয়েছে। ফাঁকা বাড়িতে গভীর রাতে গোচালা ঘরে ফাঁসিতে ঝুলানো লাশ। এ ঘটনার অন্য কোন কারণ থাকতে পারেনা। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ২২ মার্চ খুনি সবুজ মিয়া নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামি করে নেত্রকোনা মডেল থানা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি সিআইডি তে আসার পর উপপরিদর্শক প্রীতেশ তালুকদার দীর্ঘ তদন্ত শেষে সবুজ মিয়ার বাড়ির আশেপাশে অবস্থান করতে হয়ে তার পরকীয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে। তার পর প্রেমিকা মিনা বেগমকে গ্রেফতার করে মূল রহস্য উদঘাটন করেন সিআইডির এ কর্মকর্তা।

সিআইডি পুলিশ জানায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউরা ইউনিয়নের দ্বিরালী গ্রামের মৃত আনফর মিয়ার পুত্র সবুজ মিয়া স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ফরিদা বেগম (১৬)। স্ত্রী বেদানা বেগমসহ একই বাসায় বসবাস করা-কালীন সময়ে সোহেল নামের সবুজ মিয়ার ভাগ্নের সাথে ফরিদার প্রেম ঘটে। এবং পারিবারিক ভাবেই সোহেলের সাথে ফরিদার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একসময় ফরিদাকে বিবাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে তারা। কিন্তু সোহেলের মায়ের পাত্রী পছন্দ হয়নি বলে বিয়ে ভেঙে যায়।

ঘটনার দিন ১৬ অক্টোবর সবুজ মিয়ার বাড়ির পাশে জনতা বাজারে যাত্রা গানের রিহার্সাল চলছিল। সবুজ মিয়া ও ছোট ভাই চান মিয়ার বসত ঘর পাশাপাশি। রাত অনুমান দশটার দিকে বাড়ির নারী-পুরুষ সবাই যাত্রা দেখতে জনতা বাজারে চলে যায়। বাড়িতে থাকে সবুজ মিয়ার মেয়ে ফরিদা (১৬) ও তার ছোট দুইটি ভাই বোন। ছোট ভাই চান মিয়া কুমিল্লা অবস্থান করলেও তাদের পাশের ঘরেই থাকতেন চান মিয়ার স্ত্রী। রাত অনুমান এগারোটার দিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সবুজ মিয়া যাত্রা নাটক হতে চুপিসারে বাড়িতে চলে আসে। আপন ছোট ভাইয়ের বউ মিনা বেগমকে কোলে করে গোচালা ঘরে নিয়ে যায় এবং দুইজনে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। শব্দ পেয়ে সবুজের মেয়ে ফরিদা গোচালা ঘরে ঢুকে তার পিতা সবুজ মিয়া ও চাচি মিনা বেগমকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে এবং সে বলে আমি আম্মুর কাছে সব বলে দিব। সাথে সাথে সবুজ মিয়া তার মেয়েকে ধরে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।

মেয়ে ফরিদার মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য লাশ রশি দিয়ে গোচালার বাশেঁর সাথে ঝুলিয়ে পাশে একটা কাঠের চেয়ার রেখে বাড়ি থেকে আবার যাত্রা গানে চলে যায়। রাত অনুমান দুইটার দিকে অন্যান্য লোকজনসহ ফরিদার মা বাড়িতে ফিরে ফরিদাকে না পায়ে খোঁজাখুঁজি করে গোচালা ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এদিকে খুনি সবুজ মিয়া খবর পাওয়া মাত্র জ্ঞান হারানোর নিখুঁত অভিনয় করে।

পরের দিন থানা পুলিশ এসে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। এই কথা গুলো খুনি সবুজ মিয়ার প্রেমিকা আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মিনা বেগম ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

প্রীতেশ তালুকদার দীর্ঘদিন রহস্যজনক হত্যার তদন্ত করে তদন্ত শেষে নিজে বাদী হয়ে গ্রেফতার কৃত পলাতক আসামি সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। নিহত ফরিদার পাষন্ড পিতা সবুজ মিয়াকে অবশেষে সিআইডি পুলিশ জেলার দুর্গাপুরের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শিক্ষক ছাত্রী কঠিন প্রেম, এলাকায় তোলপাড়

বাঙ্গালী ডাঃ শিউলি স্বামী ছাড়াই সন্তানের মা হলেন !

চরমোনাই পীরের মুরিদ শিশু ধর্ষণকারী খুনি মোবারক গ্রেফতার